Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আল কোরআনের ইন্টারলক ১৯ সংখ্যাতাত্ত্বিক কোড নম্বর

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা মোহাম্মদ আবুল হোসাইন পাটওয়ারী : ‘হে রাসূল! বলুন আমার পালন কর্তার কথা লেখার জন্য যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও। মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহাবিজ্ঞানময় হেকমত ওয়ালা, বিজ্ঞানময় আল কুরআনের ধারাবাহিক অগ্রগতির উৎকর্ষসাধনে সফলতা লাভ করেছে বর্তমান বিজ্ঞানী ও গবেষক পরিষদ। অজ্ঞতার চরম পর্যায়ে আরব জাতি যখন চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, ঠিক তখন তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিলের মাধ্যমে বলেন, ‘হে প্রিয় বন্ধু! আপনি বলুন, এটি এমন এক বাণী যার মাঝে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি মুত্তাকীনদের জন্য হেদায়াত স্বরূপ। আল কুরআন
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কুরআন আমি অবতীর্ণ করেছি, আর এর হেফাজত আমি নিজেই করবো।’ এটি এমন এক বাণী যার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা কারো ক্ষমতা নেই। এই কুরআন সুদীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা বা আয়াতাংশ নাজিল হয় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র ওপর। এই আল কুরআন আল্লাহর বাণী হযরত জিব্রাইল (আ.)’র মারফত হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র ওপর নাজিল হয়েছে।
মুসলিম জাতির ধর্মীয় মহাগ্রন্থ আল কুরআনের শব্দ, আয়াত, সুর ঝঙ্কার সর্বযুগের সব কবি, সাহিত্যিক ও পন্ডিতদের বিমোহিত করে তুলছে। এর তেলাওয়াতের সুর লহরিতে মুগ্ধ হয়ে বহু কাফের, মুশরেক, ইহুদি, খ্রিস্টান, নাসারা পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের গবেষণায় ব্যাপিত হয়েছে। এই আল কুরআনকে কম্পিউটারের মাধ্যমে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, বিশ্বের সব মানুষ কেয়ামত পর্যন্ত গবেষণা করার পরও এই আল কুরআনের ভাবধারায় একটি ছন্দ বা শব্দ বানানো বা তৈরি করা কারো দ্বারা সম্ভব হবে না। কারণ এটি এমন এক পুতপবিত্র মহাগ্রন্থ যে এটি পবিত্রতা ব্যতীত স্পর্শ করা নিষেধ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জাদুঘর লন্ডনের নিউইয়র্ক, সেখানে বিশ্বের সব ধমের ধর্মগ্রন্থ রয়েছে,ু সব পুস্তক ও ধর্মীয় গ্রন্থ যে যেভাবে ইচ্ছা স্পর্শ করতে পারেন কোনো বাধা নেই। কিন্তু সেই জাদুঘরে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ওপর কম্পিউটার স্ক্রিনে লেখা ভেসে উঠে, যার অর্থ দয়া করে আমাকে অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করো না।
মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলেন, ইহার উপরে আছে উনিশ। আল্লাহ তায়ালার বাণী ইহার উপর উনিশ এই শব্দটির প্রতি কৌতূহলী হয়ে যুগ যুগ ধরে বিশ্বের বহু অভিজ্ঞ পন্ডিত, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, ভাষাবিদ, গবেষকরা মহাগ্রন্থ, আল কুরআনের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই উনিশ শব্দটি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের কোড নম্বর। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের এক অত্যাশ্চার্য সংখ্যাতাত্তি¡ক জটিল জাল পাতা রয়েছে যা অতি অভিনব এবং অতিশয় বিস্ময়কর। এটি ১৯টি সংখ্যার সুদৃঢ় বুনন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের প্রথম সূরায় সর্বপ্রথম আয়াত হচ্ছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এ আয়াতে অক্ষর সংখ্যা ১৯টি, আর এই আয়াতে শব্দ সংখ্যা ৪টি, এই আয়াতের প্রথম ইসিম শব্দটি মহাগ্রন্থ আল কুরআনে সর্বমোট ১৯ বার ব্যবহার হয়েছে। আর সেই সংখ্যার অক্ষরগুলোও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য, দ্বিতীয় আল্লাহ সর্বমোট ২৬৯৮ বার ব্যবহার হয়েছে যা ১৯ শব্দটি দ্বারাই বিভাজ্য, যেমন ২৬৯৮১৯=১৪২। আর এবাক্যের তৃতীয় রহমান শব্দটি সর্বমোট ৫৭ বার ব্যবহার হয়েছে, তাহাও ১৯ শব্দটি দ্বারা বিভাজ্য যেমন-৫৭১৯=৩। এই আয়াতে, চতুর্থ রাহিম শব্দটি কালামে পাকে সর্বমোট ১১৪ বার ব্যবহার হয়েছে তাহাও ১৯ শব্দটি দ্বারা বিভাজ্য যেমন ১১৪১৯=৬। পরিকল্পনাহীনভাবে এই পরিসংখ্যানগত আল-কুরআনের কোড নম্বর মিলের নিখুঁত মাত্রা একবারেই অসম্ভব, আর বিশেষ করে এই আয়াতের প্রতিটি অক্ষরই মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সংখ্যা জাল প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যবহৃত এক একটি সৈনিক। কালামে পাকে সূরা সংখ্যা ১১৪টি আর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আয়াতটিও ব্যবহার হয়ে ১১৪ বার যা ১৯ সংখ্যা দ্বারাই ব্যবহার বা বিভাজ্য করা যায়। এগুলো হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের রহস্যময় শব্দ যা ভাষানীতির অধীন নয়। এটিই মূলত আল কুরআনের কোড নম্বর নামে অবিহিত।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ১১৪টি সূরার মধ্যে অধিকাংশ সূরার প্রথমে কতগুলো বিচ্ছিন্ন বা বিক্ষিপ্ত হরফ বা অক্ষর আছে, যার অর্থ তাৎপর্য, সারাংশ মূল বক্তব্য, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ একমাত্র আল্লাহ এবং তার রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) ব্যতীত আর কারো জানা নেই। যেমন ১. আলিফ-লাম-মিম, ২. আলিফ-লাম, রা. ৩. হা-মিম, ৪. ত্বো-হা, ৫. ত্বো সিন, ৬. ইয়াসিন, ত্বো সিন মিম, ৭. ছোয়াদ, ৮. ক্বাফ-হা, ৯. আলিফ-লাম-মিম-ছোয়াদ, ১০. আইন-সিন-ক্বাফসহ আরো বহু শব্দ বা অক্ষর। যা আল-কুরআনের কোড নম্বর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো হরফে মোকাত্তে¡য়াত নামে পরিচিত।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের উক্ত কোড নম্বরগুলো সম্পর্কে পাশ্চাত্যের সমালোচকরা তাদের জ্ঞান, ঈমান ও বিশ্বাসের ধরণ অনুযায়ী মনগড়া শ্রæতিকটু করে থাকে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন খ্রিস্টান অনুবাদক যেমন সেল, রডওয়েল, পামার লন ড্রেকসহ আরো অনেকেই আল-কুরআনের প্রতি বিরূপ পোষণ করে বলেছেন, সূরার প্রথম বিচ্ছিন্ন অক্ষর বা হরফে মুক্বাত্তে¡য়াত তা মূলত আল-কুরআনের অংশ নয়। এগুলো নাকি আর-কুরআনের অনুলিখকদের নামের আধ্যাক্ষরের সাংকেতিক চিহ্ন মাত্র। মূলত এগুলো হচ্ছে কোনো একটি সূরা যখন কোনো একটি বিশেষ কোড নাম্বার দ্বারা শুরু হয় আর সেই সূরাতে সেই কোডের অক্ষর বা শব্দগুলো যত বার ব্যবহার হয় সে সংখ্যাটি পৃথকভাবে সর্বসময়ই ১৯ সংখ্যাটি দ্বারা বিভাজ্য এবং সমষ্টিগতভাবেও তা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয়। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের একটি বর্ণ বা অক্ষর যতগুলো কোডে বা ব্যবহার হয়েছে আর যতগুলো সূরায় এ কোড নম্বরগুলো ব্যবহার পেয়েছে, সেসব সূরার বিশেষ বর্ণটির সমষ্টি সর্বক্ষেত্রে ১৯ সংখ্যাটি দ্বারা বিভাজ্য। কোনো একটি সূরার আপাত দৃষ্টিতে একই ধরনের কোড সংবলিত সূরাসমূহ এবং তাওকীফী রূপে নির্ধারিত এ ধরনের কোড সংবলিত সূরায় বিশেষ কোনো বর্ণকে যদি গননা করা যায়, তবে এর সমষ্টি সব সময়ই ১৯ সংখ্যাটি দ্বারা বিভাজ্য পাওয়া যায়। এখণ প্রশ্ন হলো মহাগ্রন্থ আল কুরআনের নিরাপত্তা এবং তার মাঝে স্বর্গীয় প্রতীতি হিসেবে সংখ্যাতাত্তি¡ক, এজাল বুননের জন্য বিশেষভাবে কেন ১৯ সংখ্যাটিকে নির্ধারণ করা হলো। এর উত্তরে বলা যায়, যে সংখ্যাতত্ত¡ সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা অবশ্যই জানেন যে, ১৯ সংখ্যাটি হলো সর্বপ্রথম অনন্য ধর্মী সংখ্যা যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা হচ্ছে ১ এবং ৯/১ হচ্ছে (০) শূন্য সংখ্যার পরে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রথম সংখ্যা আর ১ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা যার কোনো তুলনা নেই, অপরদিকে ৯ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাধিক্কের সর্বশেষ সংখ্যা যার অনুপম গুণ অন্য কোনো সংখ্যায় নেই। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা যাদের সাহায্য ব্যতীত কোনো সংখ্যাই ধারণা করা সম্ভব নয়। অপরদেিক ১ সংখ্যাটি তার নিজস্ব সত্তা হারায় না। অতএব ১৯ শব্দটি যেমন আল-কুরআনের নিরাপত্তার একটি বিশেষ সংখ্যা তাই এই ১৯ শব্দটি আমাদের অবহিত করে দেয় যে এই আল কুরআন এমন এক মহান কিতাব যার মাঝে মিথ্যার কোনো অনুপ্রবেশ করতে পারে না এবং পারবেও না। এই কুরআন মুমিনদের জন্য হেদায়াতের আলো বা রাস্তা, যেহেতু আল্লাহ নিজেই বলেছেন, আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই। ইহা এমন এক মহাসাফল্য। আর ১৯-এর সংখ্যাতাত্তি¡ক মান এটি সেই অনন্য প্রতীতি মহান আল্লাহতায়ালার একাত্মের সুদৃঢ় প্রতীক।
উক্ত ১৯ সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবনের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এই মহাগ্রন্থ আল কুরআন মানব সৃষ্টি হতেই পারে না।



 

Show all comments
  • parvez ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১:৩৭ পিএম says : 0
    eta kono maner article hoy ni. Mawlana Rashid ahmed Ludhianwi-r e bepare akti osadharn article ache. pore dekhun.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ